× Warning! Check your Cooke | Total Visitor : 86822

বিশেষ প্রতিবেদন

Published :
09-09-2020

Total Reader: 520



যেথায় পাখির ডাকে আঁধার গড়িয়ে আলো ফোটে


রাজু আহমেদ : সকালে ঘুম থেকে উঠে শোবার ঘরের জানালা খুলতেই জবা গাছে ধরে থাকা ফুলের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে পুচকে একটা রঙিন পাখি ঠাই বাতাসে ভেসে রয়েছে। তার পাখা দুটো অনবরত ঝাপটা দিয়েই চলেছে। কুচকুচে কালো ঠোট দুটো শরীরের তুলনায় লম্বা। জবা ফুল থেকে পুচকে এই টুনটুনি পাখি মধু আহরণে ব্যস্ত।

একটু দূরে পেপে গাছে হলুদ বরণের আরেকটি পাখি পাকা পেপেতে মুখ ডুবিয়ে পেপে খাচ্ছে। গায়ের হলুদের সাথে পাখায় কালো কয়েকটি পালক। তার ঠোট দুটো লাল ও বেঁটে। কেউ বলে এর নাম বউ কথা কও, আবার কেউ বলে হলদে ফোটা।

আর দূরে বিদ্যুতের তারে বসে কালো কুচকুচে বরণের কয়েকটি পাখি মাঝে মাঝেই ডানা ঝাপটে তীর বেগে নিচের দিকে নেমে বাতাসে ভেসে থাকা পোকা ঠোক দিয়ে ধরে আবারো সেই তারে ফিরে গিয়ে বসছে। ফিঙে নামের এই পাখিগুলোর লেজ মাছের লেজের মতো; মাঝ খানে ফাড়া ও লম্বা।

রাস্তার ধারে ঝরে পড়া পাতাগুলোর কাছে মোটা কন্ঠে কিচির-মিচির শব্দ। ধুসর রঙের এক দল পাখি মাটি থেকে ঠোট দিয়ে পোকামাকড় কুড়িয়ে; আবার নিজেদের মধ্যে যেনো কিচির-মিচির গল্প জুড়ছে। সাত ভাই চম্পা নামের এই পাখিগুলোর চিৎকার চেচামেচি শুনে মনে হবে তারা যেনো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। পাশের নারকেল গাছে লাল, হলুদ ও কালোসহ কয়েকটি রঙের পালক যুক্ত একটি পাখি তার শক্ত ঠোটে গাছের মাঝ বরাবর ঠোকর দিয়েই চলেছে। তার মাথায় আবার রঙিন ঝুঁটি। কাঠ ঠোকরা নামের এই পাখি যখন গাছে ঠোকর দেয়া শুরু করে তার শব্দে তৈরি হয় আলাদা এক ছন্দ।

দূর থেকে ভেসে আসছে সাদা-কালো পালকের চঞ্চল গড়নের দোয়েল পাখির পরিচিত শিসের শব্দ। বাড়ির ডালিম গাছে বাসা করেছে চড়ুই পাখি। সদ্যফোটা বাচ্চাগুলোও অনবরত তাদের মাকে ডেকেই চলেছে।

সকাল গড়িয়ে যেতেই কালো ও ধুসর বর্ণের পালকে সাজা কাকের চিৎকার। ভর দুপুরে পুকুর পাড়ের ঘন পাতায় মোড়ানো গাছটাতে কাকের গড়া বাসার পাশের ডালে বসে কোকিল গান জুড়েছে। দুপুর গড়িয়ে পড়তেই বাগানে পরিচিত ঘুঘু পাখির গম্ভির হাকডাক। ঐ দূর আকাশে ডানা মেলে ধরে মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে ভেসে চলেছে চিল।

বিকেলে জলাধারগুলোর কাছে বিক্ষিপ্ত স্থানে বসে থাকা বসুজ বর্ণের এক দল ছোট আকারের পাখি, শুধু পানির দিকে তীর বেগে নেমে মাছ ধরে আবারো আকাশ পানে ছুটছে। মাছরাঙ্গা নামে সুপরিচিত পাখিগুলো খুব চঞ্চল ও ধুর্ত। একটু দূরেই দল বেধে রয়েছে শালিক পাখির দল।

সন্ধ্যা নামার মুহুর্তে চড়ুই-বাবুই পাখির ঘরে ফিরে একত্রে এলোমেলো কলোরব। সন্ধ্যার পর থেকেই বড় গাছগুলোতে সাদা বা ধুসর রঙের গলা ফোলা বিশালদেহী পাখির ডানা ঝাপটানেরার শব্দ। মাঝে মধ্যে তারা ভূতুরে কণ্ঠে কাকে যেনো বার্তা দেয়। পেঁচা জেনেও রাতবিরাতে চলতি পথে এর ডানা ঝাপানোর শব্দে অনেকেই ভয়ে আঁৎকে ওঠেন। আবার সন্ধ্যার পর পাড়ার দীর্ঘজীবী বিশালাকার বৃক্ষগুলোতে উলটো হয়ে লটকে থাকা বাদুর দেখে অনেকেই বিরক্ত হয়। বাদুর অন্ধ, চোখে দেখে না, শব্দ মেপে ওড়ে। তার পরো পুকুর থেকে কিভাবে যে মাছ চুরি করে তা না দেখলে হয়তো এই প্রকৃতিকেই অগ্রাহ্য করা হয়।

ষড়ঋতুর এই প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু নতুন পাখিও চোখে পড়ে। তারা শুধু ওই নির্দিষ্ট ঋতুতেই ডানা মেলে তাদের আশির্বাদ স্বরূপ উপস্থিতি আমাদের জানান দিয়ে যায়। নানা বর্ণের, আকারের ও মধুর কণ্ঠের পাখির সাথে প্রকৃতির যে অটুট বন্ধন।

যান্ত্রিক কোলাহলের এই শহরে এমনটা দেখা না গেলেও; শহর ছেড়ে একটু দূরে যেখানকার মাঠে এখনো ধানের আবাদ হয়, সবজি ফলানো হয় বাড়ির আঙিনায়, মেঠো পথে এখনো মাটির গন্ধ স্পষ্ট, দৃষ্টি মেললেই যেখানে সবুজের সমারোহ, এমন প্রশান্তিদায়ক এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামার পরো নানা বর্ণের পাখিদের এমন উপস্থিতি গতানুগতিক ও স্বাভাবিক। যা হয়তো আমাদের পরিচিত এই শহরে অস্বাভাবিক, বেমানান বা কারো কারো কাছে হরিয়ে যাওয়া কোন স্মৃতিমাত্র।

এসংক্রান্ত আরো সংবাদ : ফিচার




একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চার পাশে ঘটে যাওয়া সংবাদ উপযোগী যে কোন ঘটনার ছবি বা ভুক্তভোগী ও সম্পৃক্তদের মোবাইল নম্বর আমাদের পাঠাতে পারেন।

সম্পাদক : রাজু আহমেদ

বার্তাকক্ষ
এসোসিয়েশন ভবন
৬১০০, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
newsdailyrajshahi@gmail.com
call@ 01750142903